সাংবাদিকের হাত ও চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন, ডিবি’র বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
ডেস্ক রিপোর্ট : দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশের এসআই আকরাম হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও ৭-৮জন উল্লেখ করে জেলা ময়মনসিংহের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ বাহাদুর আদালতে মামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিকের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট খায়ের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন ২০১৩ এর ১৩(১), ২(খ), ১৫ (১) ও ১৫ (৩) ধারায় এই মামলার আবেদন করা হয়।
বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাদী সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিকের জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, এসআই আকরাম হোসেন তাকে আটক করে ডিবি হেফাজতে রাখার নামে অকথ্য নির্যাতন চালায়। যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আকরামের যোগসাজশে ষড়যন্ত্রমূলক ২টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ দুইমাস থাকতে হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে। মামলা দেওয়ার আগে তার চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন করে এসআই আকরাম হোসেনসহ অন্য বিবাদীরা। জেলখানায় নির্যাতন করতে ফোনে করা হয় তদবির, তাদের নামের তালিকা এবং ফোন নম্বর যাচাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদন করেছেন সাংবাদিক রফিক।
এসআই আকরামের বিরুদ্ধে সাংবাদিক রফিক ইতোমধ্যে পুলিশের ‘আইজিপি’স কমপ্লেইন মনিটরিং’ সেলে দুটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। যার অভিযোগ নম্বর SL-17 এবং তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২১।
অভিযোগপত্রে তিনি জানান, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটের বিপরীত দিকে আমি অবস্থান করছিলাম। এসআই আকরামের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি কালো গাড়িতে করে আমার পত্রিকার ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে থাকা আমার জমি ক্রয়ের দলিল, ব্যাংকের চেক ও কম্পিউটার জব্দ করে। দলিল ও ব্যাংক চেক প্রতিপক্ষের কাছে তুলে দিয়ে জব্দ দেখানো হয় শুধু কম্পিউটার। সেখান থেকে আমাকে নেয়া হয় ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র পুরাতন গুদারাঘাটস্থ দুর্গম চর এলাকায়। দু’চোখ ও দু’হাত পেছনে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়।
দুইবছর পরে কেন বিষয়টি সামনে এনেছেন- এমন প্রশ্নে সাংবাদিক রফিক জানান, তিনি ঘটনাটি চক্ষুলজ্জার কারণে সামনে আনতে পারেননি এতদিন।
তিনি জানান, গত বছরের ডিসেম্বরের ২২ তারিখে অজ্ঞাত কোন এক ব্যক্তি তার ম্যাসেঞ্জারে চোখ বাঁধা ছবি প্রদান করেন। যা দেখে তিনি আঁতকে উঠেন এবং সেই সব নির্যাতনের দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসতে শুরু করে। এর পরপরই তার এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হতে শুরু করে। এ কারণেই দুইবছর পর মুখ খুললেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে এসআই আকরাম হোসেন বলেন, ওনি (খায়রুল আলম রফিক) আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ দিয়েছে তা আমি এখনও দেখি নাই। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। তবে এর আগেও ২০১৮ সালে তিনি (খায়রুল আলম রফিক) আমার নামে একটি অভিযোগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়েছিলেন। সেটা পুলিশ হেডকোয়ার্টাস হয়ে আমাদের ময়মনসিংহে এসেছিল। এখানে আমার সিনিয়র যারা আছেন তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তৎকালীন সময়ে আমার বিরুদ্ধে করা তার (খায়রুল আলম রফিক) কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাই আমার বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নিতে পারেনি আমার সিনিয়ররা। ওনার (খায়রুল আলম রফিক) সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। ওনি কেন এসব করছে জানি না। আর আমি ওনাকে কোন মামলায় আটকও করিনি। আটক করেছে কে আমি জানি না। মনে হয়, মামলার তদন্তকারী অফিসার।’
চোখ বেঁধে নির্যাতন করেছেন এমন প্রশ্নের উওর জানতে চাইলে এসআই আকরাম হোসেন বলেন, চোখ বাধা হয়েছে কিন্তু কোনো নির্যাতন করা হয়নি।
জানতে চাইলে কেন চোখ বেঁধে ছিলেন, উওরে কোন কথা বলেননি তিনি, পরে বলেন জুয়েল সব জানে। আর আমার বিরুদ্ধে যদি মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগসাজস থাকে সেটা প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই।’