রক্তদানে প্রাণ বাচিঁয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াস,সংগঠন ভাবনায় মো:এমদাদুল ইসলাম
মো: এমদাদুল ইসলাম: বোবা পৃথিবীর মতো ফেল ফের তাকিয়ে ভাবছে সবাই কাঁদছে কেন? তার পুতুলের বিয়েতে আসছে না কেন? দৌড়ে মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছে কিন্তু তাকে সবাই আঠকিয়ে রাখছে। আজ আমার পুতুলের বিয়ে সবাই আনন্দ করবে তা না কওে, সবাই কাঁদছে তোমরাই বল, আমি কি অপরাধ করেছি? সবে মাত্র পাঁচ বছর বয়স হয়েছে পাপড়ীর এত কিছু না বুঝলেও বুঝতে পারছে আমার মা নুরুন্নাহার কোন কথা বলছে না শুয়ে আছে কেন?। আজ উনিশে রমজান ২০১৮ সালের পাপড়ীর মা মারা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মিক্স এনত্রাইটিক্স অসুখে ভুগছিলেন সেজন্য কয়েকদিন পরপর রক্ত দিতে হতো। অবশ্য ও পজেটিভ রক্ত পাওয়া এত সহজ বিষয় ছিল না। তারপরও পরিবার থেকে কম চেষ্টা করা হয়নি।
নেত্রকোনা জেলার সদর ইউনিয়নের কুমড়ী গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে নূরুন্নাহারের সাথে খুব জাঁকজমক ভাবে জর্ডান প্রবাসী নেত্রকোনা জেলার গোহালাকান্দ ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার আবদুস সাত্তারের ছেলে ফিরুজ সাঁইয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পাঁচ বছর পেরোতে না পেরোতেই তার অকাল মৃত্য কোনো কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে। জানা যায় স্ত্রীকে সে খুবই ভালবাসত মারা যাওয়ায় নিজেকে খুব অসহায় ভাবছে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড় সুতরাং তার ওপর রয়েছে পরিবারের অনেক দায়িত্ব। তাছাড়া ৫ বছর বয়সের মেয়ের লালন-পালনের চিন্তা সবই তাকে আরো অসহায় করে তুলেছে। যা হোক পরিবারের সবার সহযোগিতায় পাপড়ী এ বছর সাত বছরে পা দিয়েছে। হাটি হাটি পা পা করে মেয়ে বড় হতে চলেছে। তার সমস্থ হৃদয় জুড়ে ভাবনা পাপড়ী, তাকে নিয়ে রচনা করতে চায় আরেকটি নতুন বিশ্ব।বিয়ের কথা বললেই সে এড়িয়ে যান। বরং বলেন আমার মেয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যতদিন বেঁচে আছি,আর বেঁচে থাকতে চাই এই বিশ্বের সকল মানুষের কাছে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে। সবার হৃদয়ের মাঝে থাকতে চাই একজন রক্তদাতা হিসেবে।
ইতিমধ্যে তিনি সাতটি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর ২০,০০০ হাজার তরুণ- তরুনী ও যুবদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন পাপড়ী রক্তদান ফাউন্ডেশন। এই সংগঠন দেশে-বিদেশে সকল মানুষের কল্যাণে রক্তদানের মাধ্যমে বারবার নুরুন্নাহারকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই । আমার পাপড়ীর মাধ্যমে, আমার প্রাণের সংগঠন এক সময় সারা বিশ্বের কোটি মানুষকে রক্ত দিয়ে মানুষের কল্যণে দাঁড়াবে। এগিয়ে আসবে কোটি প্রাণ বাছিয়ে তুলবে লক্ষে ।রক্তের অভাবে কেউ মরবে না, আমার মত কেউ অসহায় হবেনা, পাপড়ীর মতো কেউ এতিম হয়ে বড় হবে না। আজকের পাপড়ী রক্তদান ফাউন্ডেষন সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ছুটে গিয়ে রক্ত সেবায় কোটি প্রাণ বাঁচিয়ে তুলতে সহযোগীতা করবে এ আমার প্রত্যাশা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার এই সামাজিক সংগঠন মানেই একটি সামাজিক সেবা মূলক রক্ত আন্দোলন। জর্ডানসহ বাংলাদেশের নেত্রকোনা সহ বেশ কয়েকটি জেলায় পাপড়ী রক্তদান ফাউন্ডেশনের অসংখ্য লোক স্বেচ্ছায় রক্তদানে প্রত্তুত রয়েছে সব সময়।আমাদের কাজ আরো সুস্থ-সুন্দর ভাবে করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রত্যশা করি। তার প্রত্যাশা রক্তের অভাবে যেন একটি প্রাণ মারা না যায়, আমার মতো অসহায় না হয়।
আপনারা ধৈর্য সহকারে মানুষের কল্যাণে রোগীদের পাশে থাকবেন সবসময়, সে অনুযায়ী সমর্থের মধ্যে থেকে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগঠনের সবাই কাজ করবেন সে বিশ্বাস করি সব সময়।সংগঠনের এই দুই বছরের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ রক্তদাতা ও সাংবাদিক সংগঠনের দুই একজনকে কে সম্মাননা স্মারক অসহায় শীতার্থদের মাঝে শীত বস্ত্র প্রদানের মাধ্যমে,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়ে সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার এই চেষ্টার ধারাবাহিকতা সব সময় অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে আমি ও আমার সংঘটন সব সময় মানুষের পাশে আছি এবং থাকব। জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমি নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় সবসময় আছি। আমার প্রাণ প্রিয় সংগঠন পাপড়ী রক্তদান ফাউন্ডেশন সবসময় থাকবে বিশ্বাস করি। এই দুই বছরে সংগঠনে মানুষের সেবায় চৌদ্দশ ব্যাগ রক্ত দিতে সক্ষম হয়েছি এবং ২০ হাজার সদস্যের গ্রুপ রয়েছে মানুষের কল্যাণে। প্রায়ই লাইভে আসি কথা বলি সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির করে নেই। সাংগঠনিক রক্তদানের আন্দোলন প্রক্রিয়ায় যদি সফলতা আসে তাহলেই আমার মা পাপড়ী, আমার প্রানের সংগঠন,স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি বার বার দেখার জন্যই সংগঠন করার আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠা। এলাকাবাসী মনে করেন তার স্ত্রী মারা যাওয়ার যে কষ্ঠ সে কষ্ঠ কিছুটা লাঘব করার জন্য যে প্রক্রিয়া ফিরুজ সাই চালিয়ে যাচ্ছে আমরা মানব কল্যাণে সহযোগিকা করতে একমত পোষন করি। তার রক্তদান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুঃখ কষ্ঠ নিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকার যে অম্লমধুর চেষ্টা সত্যিই বিরল। ফিরুজ সাঁই ১৯৮২ সালের পহেলা নভেম্বর নিজামপুর গ্রমে জন্মগ্রহণ করেন। এবং ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল ত্রিশাল কাজী নজরুল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং ২০০৩ সালে নেত্রকোনার ভুগী জাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে প্রবাসে জীবন যাপন শুরু করেন। তার প্রয়াত স্ত্রীর সম্মান বাঁচিয়ে রাখতে চান রক্তদান সংগঠনের মাধ্যমে।