পূর্বধলা সরকারি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার পূর্বধলা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কলেজের উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রত্যেক শির্ক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৩শ টাকা অতিরিক্ত আদায় করার অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠছে। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: সামছুল ইসলাম কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানা গেছে এ বছর এইচএসসি ফরম পূরণের ফি ধার্য করা হয়েছে মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ১৭৭০ টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ২৩৩০টাকা। ফরম পূরনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে ৮জুন থেকে ২২জুন পর্যন্ত। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় কোন অবস্থাতেই নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা যাবে না। এ সংক্রান্ত কোন তথ্য দৃষ্টিগোচর হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ প্যানেল বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচএসসি ফরম পুরণের জন্য পূর্বধলা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের গত ৮জুন স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে বলা হয় এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ এর প্রস্তুতি মূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের তারিখ ১৩/৬/২০২২ থেকে ১৬/৬/২০২২ তারিখ বেলা ২টা পর্যন্ত। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা কি করবে নোটিশে তা উল্লেখ করা হয় নি। জানা গেছে পূর্বধলা সরকারি কলেজে এ বছর মানবিক শাখায় ৭৯০জন এবং বিজ্ঞান ও বাণিজ্য মিলিয়ে ৭০-৮০ জনের মত শিক্ষার্থী রয়েছে।
জানা গেছে এ বছর কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষার মাত্র ৮৪জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সেশন ফি, বেতন ও অন্যান্য খাতের কথা উল্লেখ করে ১৫০০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ফি ধার্য করা হয়েছে ৩১০০টাকা। বোর্ড নির্ধারিত ফিতে বিজ্ঞান এবং মানবিক ও বাণ্যিজ্যে শাখায় ফি এর পরিমাণ ৫৬০ টাকার ব্যবধান থাকলেও কলেজ নির্ধারিত ফিতে কোন পার্থক্য করা হয়নি। টাকা জমা দেওয়া জন্য একটি ব্যাংকের সরবরাহকৃত রশিদে কলেজ থেকে পরীক্ষা ও অন্যান্য ফি উল্লেখ করে ৩১০০টাকা লিখে দিয়ে শিক্ষার্থীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে ব্যাংকে গিয়ে জমা দেওয়া জন্য। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয় ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে হয় বিধায় কম নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ফলে বিপাকে ও হয়রানিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে চাইলে তাদেরকে ধমক দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন। একাধিক শিক্ষার্থী জানায় সরকারি কলেজে কম খরচে পড়াশোনা করার আশায় ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখন মাসিক বেতন ২৫টাকা ধার্য্য থাকলেও আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে বর্তমান দুর্যোগ সময়ে অনেক শিক্ষার্থীর ফরমপূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পিতাহীন এক শিক্ষার্থী বলেছেন এত বেশি টাকায় ফরম পূরণের কথা শুনে তার মা তাকে ফরম পূরণ করতে পারবেনা বলে জানিয়েছেন। ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরম পূরণ কমিটির আহবায়ক রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক এমদাদুল হক আকন্দ জানান বোর্ড নির্ধারিত ফি এর সাথে ১২ মাসের বেতন ৩০০টাকা, কলেজ উন্নয়ন ফি ৩০০টাকা, স্কাউট ও রেডক্রিসেন্ট ফি জন্য ৭০টাকা নেওয়া হচ্ছে। বাকী টাকার বিষয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বলতে পারবেন। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে জানান তারা প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে ফরম পূরণ করতে পারবে।
এ বিষয়ে পূর্বধলা সরকারি কলেজের প্রতি স্বাক্ষরকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান গত ১৬জুন কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে কলেজে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পরে কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবকে ডেকে বলে দেওয়া হয়েছে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত টাকা যেন না নেওয়া হয়। এর ব্যত্যয় হলে বোর্ড কর্তৃক কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলে দায়ী হতে হবে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ সামছুল ইসলাম জানান বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এরপরও কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নিলে
লিখিত অভিযোগ পাওযা সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: আনোয়ারোল হকের ০১৭১১-০৭৪০৪৭ এই নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।