পূর্বধলায় সরকারি হালটে রাস্তা বন্ধ করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের মহিষবেড় গ্রামের মইজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদের সরকারি হালট দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। এতে চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রতিবেশী আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারসহ গ্রামের ১৪ টি পরিবার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও প্রতিকার পায়নি বলে তাদের অভিযোগ।
অভিযোগ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আগিয়া মৌজায় আনুমানিক ৩২ শতাংশ হালটের মধ্যে ১২ শতাংশ জমিতে মহিষবেড় গ্রামের মৃত তালে হোসেন এর ছেলে মইজ উদ্দিন বাড়ি-ঘর ও গাছ রোপণ করে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। চলাচলের জন্য ৬ ফুট চওড়া একটি রাস্তা ব্যবহার করতেন ভুক্তভোগী পরিবারসহ অন্যরা। কিন্তু হালটের উপর গত দুই বছর পূর্বে হালটের আনুমানিক ১২ শতাংশ জমিতে ঘর নির্মাণ করে মইজ উদ্দিন। গত ৩-৪ মাস আগে শত্রুতা পোষণ করে পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত ৭০-৮০ ফুট রাস্তা ব্যক্তিগত জায়গা দিয়ে হওয়ায় কাঁটা দিয়ে বেরা নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন প্রতিবেশী মইজ উদ্দিন। এতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারসহ অসহায় ১৪টি পরিবারের সদস্যরা।
আরো জানা গেছে, গ্রামের প্রধান সড়ক থেকে মইজ উদ্দিনের বাড়ির পাশ দিয়ে সরু একটি মাটির রাস্তা। ওই রাস্তার দক্ষিণ প্রান্তে সরকারি হালটের উপর মইজ উদ্দিনের বাড়ি। তারও দক্ষিণ পাশে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি। শত্রুতা পোষণ করে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ির উত্তর পাশে সরকারি হালটের উপর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নতুন করে হামলা ও হয়রানির আশঙ্কায় ওই রাস্তা দিয়ে আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারসহ অবরুদ্ধ ১৪টি পরিবারের কেউ চলাচল করতে সাহস পাচ্ছে না।
অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১৯৭১ সালের পূর্ব থেকেই এই রাস্তা দিয়ে আমাদের চলাফেরা। সরকারি হালটের কিছু অংশে চলাচলের জন্য রাস্তা ছিল। আনুমানিক ১২শতাংশ সরকারি হালটের মধ্যে গাছ রোপণ, পুকুর খনন এবং ঘর নির্মাণ করে দখলে নিয়ে চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন মইজ উদ্দিন। গাছগুলোর আনুমানিক মূল্য প্রায় ১লক্ষ টাকা। এখন অন্য গ্রাম হয়ে নদীর পাড় ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। মহল্লার মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া যায় না। কোনো মালামাল আনা-নেওয়া করতে পারছি না, অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিতে পারছিনা বিয়ে-শাদী সম্বন্ধে আসলে আমাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। রাস্তা নিয়ে কথা বললে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান তিনি। কখন কোন ঘটনা ঘটিয়ে মইজ উদ্দিন ও তার উশৃঙ্খল লোকজন আমাদের ফাঁসিয়ে দেন, সেই চিন্তায় পুরো পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত মইজ উদ্দিনের বড় ভাই নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার জায়গাটি আমাদের। বসবাসের জন্য পরিবারের সদস্যদের বাড়ি নির্মাণ করা হবে। সুতরাং বাড়ির ভিতর দিয়ে রাস্তা হয় কিভাবে। যেখানে রাস্তা দাবি করা হচ্ছে এখানে কোন রাস্তা ছিল না। জঙ্গলের পশ্চিম পাশে চলাচলের রাস্তা ছিল। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাস্তাটি বন্ধ করা হয়। এতে কার কি সমস্যা হলো, সেটা আমার দেখার বিষয় না। সালিসি বৈঠক বসলে সবাই রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন।
স্থানীয় কালাম ও প্রতিবেশী নিজাম সহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাস্তাটি দিয়ে শুধু নিজাম উদ্দিন এর পরিবার নয়, এলাকার অনেক মানুষ চলাচল করে থাকে। কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ ঘর নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন তিনি। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারসহ গ্রামের অনেক মানুষ। নিজাম উদ্দিনের পেশি শক্তি বেশি এবং প্রভাবশালী। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে সালিসি বৈঠকে বসা হয়েছিল। প্রথমে রাস্তার জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বললেও পরে ছাড়েননি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান সানোয়ার হোসেন চৌধুরী ঘটনার বিষয় নিয়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, নিজেই তো নিজেরটা করতে পারি না, নিজের বাড়িতে পানি আটকে আছে অথচ কোন ব্যবস্থা করতে পারি না। তিনবার সমন্বয় মিটিংয়ে উত্থাপন করার পরেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যিনি অভিযোগ করেছেন তিনিও নাকি সাংবাদিক এই বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। ইউএনও মহোদয় এর কাছে অভিযোগ করেছে ইউএনও মহোদয় দেখবেন। তবে এর আগে আমি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। মইজুদ্দিনদের লোকজন উশৃংখল টাইপের তাই সমাধান করতে পারিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি দেখার জন্য সহকারী কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হালট, গোপাট কিংবা খেলার মাঠ এসব জায়গায় বসতবাড়ি নির্মানের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ১৯০৮ সালের যে আইন রয়েছে সে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মানুষের চলাচলের রাস্তার জায়গায় কারো মালিকানা হলেও কেউ বন্ধ করতে পারে না। জনগণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা কারো অধিকার নাই।